স্টারলিংক কি? What is Starlink? | ইলন মাস্ক কত টাকার মালিক

আমরা সকলেই জানি ইলন মাস্ক হচ্ছে পুরো বিশ্বের মধ্যে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষের একজন ধনী ব্যক্তি। যখন এলেন মাস্কের কথা আমাদের মাথায় আসে তখন সর্বপ্রথম কার নেতৃত্বে দেওয়া সেই টেসলা কোম্পানি এবং তার স্পেস এক্সপ্লোরেশন ভেনচারের কথা আমাদের মাথায় সর্বপ্রথম চলে আসে।

ইলন মাস্ক কেন বিখ্যাত

কিন্তু আপনি কি জানেন বিশ্বের সেই ধনীদের তালিকায় একজন যার নাম হচ্ছে ইলন মাস্ক তিনি যে আরেকটা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছেন স্টারলিংক নামে সেটা কি আপনার জানা আছে। আমি বলব অবশ্যই আপনি স্টারলিংক নামে কোন শব্দ শোনেন নি সারা জীবন। তাই আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে আমি সেই স্টারলিংক (Starlink) সম্পর্কে আপনাদের সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। তাহলে আর দেরি কেন এখনই শুরু করা যাক।


স্টারলিংক কি? What is Starlink? | ইলন মাস্ক কত টাকার মালিক
স্টারলিংক কি? What is Starlink? | ইলন মাস্ক কত টাকার মালিক

স্টারলিংক এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে তারা যেন সারা পৃথিবীতে মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়। প্রাইভেট স্যাটেলাইটের একটি বড় অংশ ব্যবহার করে তারা এই কাজটি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে চলুন এখন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেয়া যাক সেই বিলিয়নার ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার সুযোগ ইত্যাদি কেমন হবে এবং স্টারলিংক সম্পর্কে বিস্তারিত।

ইলন মাস্ক কত টাকার মালিক

২০১৯ সালে ফোর্বসের 'আমেরিকার সবচেয়ে উদ্ভাবনী নেতৃত্ব' তালিকায় যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০২১ সালের ৮ই জুন পর্যন্ত ইলন মাস্ক বিশ্বের ২য় বিলিয়নিয়ার এবং তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 Source: উইকিপিডিয়া

স্টারলিংক কি? What is Starlink?

স্টারলিংক হচ্ছে স্পেস এক্স এর একটি শাখা। যা সাধারণত অরবিটাল স্যাটেলাইট নিয়ে নিয়মিত কাজ করে থাকে। এই কোম্পানিটি একটি বৃহৎ স্যাটেলাইট ব্যবস্থার পাশাপাশি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট-সেবা দেওয়ার কাজ আরম্ভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।


এই স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এর কাজ শুরু হয় আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে অর্থাৎ 2015 সালে। এবং তারা সর্বপ্রথম যে স্যাটেলাইট লঞ্চ করে সেটি হচ্ছে 2018 সালে অর্থাৎ প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট আরবিটে লঞ্চ করা হয়। এরপর পর বছরগুলোতে স্পেস এক্স কোম্পানি প্রায় ২ হাজারটি স্যাটেলাইট লঞ্চ করে সফল ভাবে।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

ইলন মাস্ক সর্বপ্রথম স্যাটেলাইটের কথা প্রকাশ করে 2015 সালের দিকে। ইলন মাস্কের জানান তারা স্টার লিংকের কাজ হচ্ছে যেন সারা পৃথিবীতে একটি গ্লোবাল কমিউনিকেশন সিস্টেম তৈরি করা। তাদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর কোনায় কোনায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া।


স্টারলিংক এর উদ্দেশ্য

স্টারলিংক এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের প্রতিটি গ্রাহকের কাছে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। হিউগসনেট বা ভিয়াস্যাট এর মত বড় বড় কোম্পানি যেমন স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট প্রদান করে থাকে ঠিক তেমনি স্টারলিংক এর কাজ এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে সেটিই। তাছাড়া তাদের আরেকটা বড় লক্ষ দেশে হচ্ছে যেসব গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেট নেই এবং ইন্টারনেট আছে কিন্তু তেমন ভালো না তাদের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া।


অনেক সময় দেখা যায় পৃথিবীর নানা প্রান্তের মধ্যে ইন্টারনেট সেবা এখনো পৌছায় নাই। বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকার আসবে স্টারলিংক এর এই প্রতিষ্ঠানটি। কেননা তারা চায় বিশ্বের আনাচে-কানাচে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো। যেহেতু স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেটের জন্য কোন প্রকার জমিতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করতে হয় না তাই তারা বিশেষ করে এই কাজটি করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। তাই হতে পারে আপনিও কয়েক বছরের মধ্যে এই সেবার গ্রাহক একজন হয়ে নিতে পারেন।


স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা কেমন দ্রুত হবে

‌ বলতে গেলে স্টারলিংক এর ইন্টারনেট সেবা অনেক দ্রুত গতির। একজন স্টারলিংক গ্রাহকের ভাষ্য অনুযায়ী স্টারলিংক আপনাকে প্রতি সেকেন্ডে 50 থেকে 150 মেগাবাইট ইন্টারনেট স্পিড দিতে সক্ষম। তাছাড়া এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে যে কোন আবহাওয়া ভালো থাকবে তখন একটা স্টারলিংক এর ইন্টারনেট স্পিড বেড়ে যাবে আর যখন আবহাওয়া খারাপ দেখা যাবে তখন ইন্টারনেটের স্পিড স্লো হয়ে যেতে পারে।


স্টারলিংক এর এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ইন্টারনেট স্পিড বা গ্রাহক বৃদ্ধি করার জন্য স্যাটেলাইট আরো মহাকাশে উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আরো বিভিন্ন প্রকার গ্রাউন্ড স্টেশন ইন্সটল করা হচ্ছে যাতে তাদের ইন্টারনেট স্পিড আরো বেড়ে যায়। তাছাড়া এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক দাবি করেছেন আগামী সময়ে এর মধ্যে স্টারলিংক এর ইন্টারনেট 300mbps পর্যন্ত বাড়তে পারে। তার মতে বছরের শেষদিকে এর গতি আরও উন্নত দেখা দিতে পারে।


স্টারলিংক পরিষেবার খরচ কেমন হবে

আপনার সর্বপ্রথম স্টারলিংক এর পরিষেবার প্রাথমিক মূল্য আপনার খরচ হবে 499 us ডলার মতো হবে। অর্থাৎ যা আপনাকে একটি মাউন্ট যোগ্য স্যাটেলাইট ডিস,রাউটার এবং আপনার বাড়িতে স্টারলিংক কানেক্ট করার জন্য যাবতীয় হার্ডওয়ার ইত্যাদি। আপনি যদি তাদের পরিষেবা সীমাহীন ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনার প্রতি মাসে 99 ইউএস ডলার করে খরচ করতে হবে।


আরেকটা বিষয় হচ্ছে এটা হচ্ছে বর্তমানে চলমান মূল্য। আশা করি যখন বাংলাদেশ-ভারত ইত্যাদি দেশগুলোতে এই স্টারলিংকের সেবা লঞ্চ হবে তখন আশা করা যায় দামটা আরো অনেক হারে কমে যাবে।


স্টারলিংক এর কার্যক্রম

আপনি যদি স্টারলিংকের পরিষেবা পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার বাড়িতে একটা স্যাটেলাইট ডিস কানেক্ট করতে হবে। যেটা কিনা আপনার সিগন্যাল রিসিভ করবে এবং রাউটার ব্যান্ড উইথ পাস করবে। ছাদ উঠোন কিংবা জানালাসহ প্রত্যেক জায়গাতেই এই স্যাটেলাইট ডিসটি লাগাতে পারবেন। আপনি যদি এন্ড্রয়েড কিংবা আইওএস ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য একটা বিশেষ সুবিধা রয়েছে। সে সুবিধা দেয়া হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইওএস ব্যবহারকারীদের জন্য একটা তাদের নির্দিষ্ট অ্যাপস রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই জানতে পারবেন আপনার বাড়ির পাশে কোন জায়গাতে বেশি ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে।


স্টারলিংক এর কার্যক্রম পুরো পৃথিবীর মধ্যে  এখনো প্রচার-প্রসার হয়নি বরং যুক্তরাজ্য এবং কানাডার কিছু অংশে এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। আশাকরি কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে চলে আসবে। ইতিমধ্যে স্টারলিংক কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের কাছে এক লাখেরও বেশি স্যাটেলাইট টারমিনাল প্রদান করেছে। যেটা কিনা সময়ের সাথে সাথে কভারেজ ম্যাপ বৃদ্ধি করবে। স্টারলিংক এর মূল্য প্রদান কার্যক্রম হচ্ছে তারা যেন পুরো পৃথিবীর মধ্যে হাই স্পিড নেটওয়ার্ক প্রদান করে।


স্টারলিংক স্যাটেলাইট এর কারনে কি কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে

যেহেতু স্টার লিংকের ইন্টারনেটের যে সেবাটি রয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে স্যাটেলাইট ভিত্তিতে। কার জন্য প্রচুর পরিমাণে স্যাটেলাইট পাঠানোর প্রয়োজন হবে মহাকাশের মধ্যে। এবং এর কারনে বিজ্ঞানীরা ধারণা করে যে যদি এত পরিমান স্যাটেলাইট আকাশের মধ্যে তোলা হয় তাহলে আকাশের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। যখন মহাকাশ মধ্যে বেশি পরিমাণে স্যাটেলাইট হয়ে যাবে তখন টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে মহাকাশে বিভিন্ন রকম বস্তু দেখা দিবে। কেননা টেলিস্কোপ এর মধ্যে তখন শুধুমাত্র এই স্যাটেলাইটগুলো দেখা যাবে।


আমরা আগে থেকে বলে এসেছি এই স্যাটেলাইটগুলো রাতের বেলায় লো আরবিটে অবস্থান করবে। যার কারণে এই স্যাটেলাইটগুলো রাতের বেলায় মহাকাশের মধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। কেননা তখন আমরা তার বদলে শুধুমাত্র এলন মাস্কের পাঠানো এই স্যাটেলাইটগুলো দেখতে পাবো। যদিওবা ইলন মাস্ক এ পর্যন্ত অনেকগুলো স্যাটেলাইট ভার্সন পরীক্ষা করেছে রাতের আকাশ কে কিভাবে পরিষ্কার রাখা যায়। সেগুলো হচ্ছে ডার্ক স্যাড, ভাইসর স্যাট ইত্যাদি।


যদি আবহাওয়ার অবস্থা খারাপ হয় তাহলে কি ঘটবে স্টারলিংক এর সাথে

পৃথিবীর প্রতিটি জায়গার আবহাওয়া একই রকম নয় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অন্য জায়গার আবহাওয়ার মধ্যে আবার অনেক তফাৎ রয়েছে। যার ফলে আবহাওয়ার কারণে সবাইকে হঠাৎ চমকে দিতে পারে। এবার অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আবহাওয়ার পরিবর্তন কি স্টারলিংক নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করবে।


স্টারলিংক এর সরাসরি অফিশিয়ালি ওয়েবসাইটের মধ্যে তারা জানিয়ে দিয়েছে যে অ্যাপ এ কিউ এর মাধ্যমে যেখানে প্রচুর পরিমাণে তুষারপাত হয় সেখানে সামান্য নেটওয়ার্ক স্লো হতে পারে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি এবং জড়ো হওয়ার কারণে ইন্টারনেট স্পিড কিছুটা ধীর গতির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে যদি আপনি একটু হলেও উপকৃত হতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। কেননা হয়তো আপনার একটি শেয়ারের কারণে অনেক ব্যক্তি স্টারলিংক সম্পূর্ণ একটি নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url