কোরবানির দোয়া | কোরবানির সঠিক নিয়ম
কোরবানির নিয়ম ও কোরবানির দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আজকের এই লেখাটি পড়ার মাধ্যমে। কোরবানি করা ফরজ নাকি ওয়াজিব কাদের কুরবানী করতে হবে? কোরবানির গোশত কিভাবে বন্টন করতে হয় এবং পশু জবাই করার সময় কোন দোয়া পড়তে হয় অর্থাৎ কোরবানির দোয়া আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ সহ বিস্তারিত জানতে পড়ুন সম্পূর্ণ লেখাটি।
কোরবানির নিয়ম
তাই আজকের এই আর্টিকেলের যদি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো ভাবে মনোযোগ
দিয়ে পড়েন তাহলে আশা করি আপনি কোরবানি সম্পর্কে অনেক মাসআলা-মাসায়েল কিংবা
কুরবানী করার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে যাবেন।
জেনে নিন কবে হবে কোরবানির ঈদ 2022 | ঈদুল আযহা ২০২২ কত তারিখে
কোরবানির নিয়ম | কোরবানির দোয়া
যখন কোরবানির ঈদ অর্থাত্ ঈদুল আজহার চলে আসে তখন বিশেষ করে আমরা যে সমস্ত
প্রশ্ন গুগলের সার্চ করে থাকি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ কুরবানী করার নিয়ম
কানুন, কুরবানী কার উপর ফরজ,কুরবানির গোশত ভাগ করার নিয়ম,কুরবানীর সাথে আকিকা
দেওয়ার নিয়ম ইত্যাদি।
ইসলামিক বিষয় আরো পড়ুন-
- নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা কিভাবে দিতে হয় দেখুন।
- নামাজের ফরজ কয়টি জেনে নিন এগুলো ছাড়া নামাজ হবে না
- ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি এবং অজু করার দোয়া সম্পর্কে জেনে নিন
- ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ অনেক সুন্দর সুন্দর নামের তালিকা
কুরবানী করার সঠিক নিয়ম
এগুলো ছাড়া আরও নানা প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো কিনা আজকেরে আর্টিকেলে সুন্দর ভাবে
তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
কোরবানির সঠিক নিয়ম
আমরা তো নিজের সাধ্যমত যার সাধ্য আছে তারা প্রায় প্রত্যেকেই কুরবানী করে থাকি
এবং প্রত্যেক মুসলমান ঈদুল আযহা উদযাপন করে থাকে কিংবা পালন করে থাকে। কিন্তু
আমরা কি জানি ঈদুল আযহা আসলে কি? তাহলে চলুন এখন আমরা জেনে নিই ঈদুল আযহা আসলে
কি।
ঈদুল আযহা বা কোরবানি কি
আযহার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ত্যাগ বা উৎসর্গ এবং কুরবান শব্দের আভিধানিক অর্থ
হচ্ছে নৈকট্য, সান্নিধ্য। হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছেন কুরবান এবং ঈদুল আযহা অর্থ
কি এই দুটি শব্দের আভিধানিক অর্থ থেকে। অর্থাৎ কোরবান কিংবা আজাহার অর্থ হচ্ছে
নিজেকে আল্লাহর রাস্তায় কিংবা উৎসর্গ করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন
করা।
প্রচলিত কুরবানীর যে অর্থটি রয়েছে সেটা দেখে বোঝা যায়, আরবি জিলহজ্ব মাসের 10
থেকে 12 তারিখের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ছাগল, গরু কিংবা
মহিষ ইত্যাদি জবেহ করে নিজেকে চেক দেওয়া কিংবা বিসর্জন করা। যেটা কিনা সরাসরি
কুরআনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন সুরা হজ্জের মধ্যে ইরশাদ করেন(অর্থ):
‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)
কোরবানীর উদ্দেশ্য কি?
কমবেশি আমরা সকলেই জানি কোরবান হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
অন্যতম মাধ্যম। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাই সালাম এর যুগ থেকেই কুরবানীর
বিধান চালু হয়েছিল। তাছাড়া হযরত আদম আলাই সালাম এর দুই ছেলে হাবিল এবং কাবিল
দুই জনেই এই কুরবানীর বিধান পালন করেছেন।
এই দুইজনের কোরবানির মধ্যে একজনের কুরবানি আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়েছে এবং
অপরজনের টা কবুল হয়নি। মূলত কোরবানির ইতিহাস রয়েছে এখান থেকেই অর্থাৎ হযরত
আদম আলাই সালাম এর যুগ থেকেই।
অর্থাৎ কোন একটা ব্যক্তির কুরবানী কবুল হওয়ার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি
গ্রহণযোগ্য সেটা হচ্ছে কোরবানি কারী ব্যাক্তির ভাবাবেগ এবং মানসিকতা সম্পর্কে
যেটা কিনা কোরআনের আয়াত থেকেই বোঝা যায়। কেননা কোরবানি হচ্ছে এমন একটা মাধ্যম
যেটা কিনা তাকওয়াবান মানুষের আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই।
কুরবানী কার উপর ফরজ?
এখন আমি আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব কুরবানী কার উপর ফরজ এই বিষয় সর্ম্পকে।
অনেকেই আছেন যারা কিনা মনে করেন আমার উপর কি কোরবানি ফরজ নাকি ফরজ নয়। তাই আমি
চিন্তা করলাম এটাও আপনাদের সাথে শেয়ার করে ফেলি তবে এটি আমাদের শ্রদ্ধেয় এবং
সম্মানিত আলেম শেখ আহমাদুল্লাহর এক বক্তব্য থেকে সংগ্রহীত।
তিনি বলেনঃ কুরবানী কি জরুরি কোনো বিধান নাকি ঐচ্ছিক? অর্থাৎ কোরবানি কি সবার
জন্য করার জরুরি নাকি কোরবানির সুন্নত,নফল, মুস্তাহাব এ জাতীয় কোন আমল। এ
বিষয়ে বলব যে এক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের দুটি প্রসিদ্ধ মত আছে।
কোরবানি করা ফরজ নাকি ওয়াজিব
(১) ওলামায়ে কেরামের অনেকেই বলেন যে কুরবানী করা এটা সকলের জন্য জরুরী যাদের
সামর্থ্য আছে কুরবানী ঈদের দিন অথবা পরবর্তী দিনগুলোতে যেগুলাতে কোরবানি করা
যায় যার কাছে নেসাব পরিমাণ টাকা আছে তার জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব
(জরুরি/বাধ্যতামূলক) না করলে গুনাহ হবে।
এটা হল এক ওলামায়ে কেরামের মত তাদের দলিলঃ সংক্ষেপে কয়েকটি বলে যায় মুসনাদে
আহমদ, ইবনে মাজাহ, মুস্তাদরাক হাকেম এবং আরো অনেকে তবে এমন একটি হাদিস বর্ণিত
হয়েছে যে হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম সহিহ বলেছে।
আল্লামা আলমানি রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেই এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন। সেটা হলো এই
নবি (সঃ) বলেছেন (অর্থ): যে ব্যক্তি কোরবানি করার তাঁর সামর্থ্য আছে,সক্ষমতা
আছে,সচ্ছলতা আছে সে ব্যক্তি যদি কোরবানি না করে সে যেন আমাদের ঈদগাহে ঈদের
নামাজ পড়তে না আসে কোরবানি করার ইচ্ছে না থাকলে সে যেন ঈদের নামাজ পড়তে না
আসে।
কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব নাকি সুন্নতে মুয়াক্কাদা
এটা কিন্তু একটা সতর্কবাণী শরীয়তে এ ধরনের নির্দেশ সুন্নত,নফল এর ক্ষেত্রে করা
হয়না। ফরয,ওয়াজিব এর ক্ষেত্রে সাধারণত করা হয় এটা হল যুক্তি। দ্বিতীয় দলিল
হলোঃ মুসনাদে আহমদে আসছেঃ এবং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ: বিখ্যাত হাদীস
ব্যাখ্যাতা তিনি বলেছেন যে হাদীসটি বিশুদ্ধ নবি (সঃ) বলেছেন (অর্থ:) হে লোক সকল
নিশ্চয়ই প্রত্যেক পরিবারের লোকের উপরে প্রত্যেক পরিবারের উপরে একটি করে
কোরবানি এবং আতিরাহ ওয়াজিব ।
আতিরাহ হল রজব মাসে যে পশু জবাই করা হয় সেটা এক সময় ওয়াজিব ছিল পরে এটা রহিত
হয়ে গেছে। তো এখান নবি (সঃ) এর ভাষা হলো অর্থ প্রত্যেক পরিবারের উপরে কোরবানি
করা জরুরি। জরুরীন আলা এই শব্দটি জরুরি বোঝানোর জন্য আসা হয়ে থাকে এটিও
বিশুদ্ধ হাদিস।
তাহলে আরো অনেকগুলো হাদিস আছে এ জাতীয় যে হাদীসগুলোর আলোকে ওলামায়ে কেরামের
একটা অংশ বলে এই কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আবু হানিফা রহ: মত এটা।
(২) এর বিপরীতে অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেন কুরবানী করা ওয়াজিব নয় এটা সুন্নাত
মুয়াক্কাদা। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা মানে কি? সুন্নত কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ
সুন্নত বিনা কারণে এটা ছাড়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়/ভালো কাজ নয়)।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং ওয়াজিবের সাথে খুব বেশি তারতম্য নেই কাছাকাছি
গুরুত্বের বিচারে প্রায়। সাহাবীদের ভিতরে অনেক প্রসিদ্ধ সাহাবী তারা কোরবানি
করতেন না ওয়াজ মনে করবে মানুষে এ ভয়ে এরকম কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
তারপরে কোন কোন বর্ণ নেই এটাকে রাসুল (সাঃ) এটাকে سنه ابيكم ابراهيم এ জাতীয়
শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এসব কারণে এরা এটাকে সুন্নাত মুয়াক্কাদা বলে। যাইহোক সর্ব সাফল্যে এই কোরবানি
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান এটাই হলো নিশ্চিত। ওয়াজিব এর মতটা গ্রহণ করলে
এটা বেশি সর্তকতা হয় ইখতিলাফ এবং মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে যায়।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি কি?
অনেক মুসলমান ভাই বোন আছেন যারা কিনা অনেকেই গুগোল কিংবা ইউটিউব এর মধ্যে চার্জ
করে থাকেন কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি কি? কেননা অনেকেই এটা মনে করেন যে
আমার কাছে এ পরিমাণ সম্পদ আছে আমার উপর কি কোরবানি ওয়াজিব হবে। চলুন এখন আমরা
সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু জেনে নিই।
কোরবানি কাদের উপর ওয়াজিব
- প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ)
- সুস্থ মস্তিষ্ক (পাগল না হওয়া)
প্রত্যেক মুসলিম নারী পুরুষ এর উপর যে ব্যক্তি 10 জিলহজ থেকে 12 ই জিলহজ
সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাবের মালিক হবে তার উপর কুরবান করা
ওয়াজিব।টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন
জমি এবং প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বাড়ি, স্বর্ণ এবং ও প্রয়োজনীয় যে সমস্ত
জিনিস আদি রয়েছে সবগুলো কোরবানির ওয়াজিব হওয়ার নেসাবের মধ্যে গণ্য করা হবে।
কোরবানি কাদের উপর ওয়াজিব
নিসাব হলোঃ আপনি যদি স্বর্ণের ক্ষেত্রে হিসাব করেন 7.5 ভরি, আর আপনি যদি রুপার
ক্ষেত্রে হিসেব করেন তাহলে সাড়ে বায়ান্ন 52.5 ভরি। আর আপনার যদি স্বর্ণ এবং
রুপা না থাকায় যদি টাকাপয়সা ইত্যাদি থাকে তাহলে আপনার সেই টাকার পরিমান সাড়ে
বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ নেসাবের পরিমাণ বলে গণ্য করা হবে।
কুরবানী দিতে হলে কত টাকার মালিক হতে হবে
তাছাড়া আপনার কাছে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ 7.5 এবং সাড়ে বায়ান্ন 52.5
তোলা রুপা এগুলো পৃথক পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে। অর্থাৎ আপনার কাছে স্বর্ণ
এর ক্ষেত্রে সরাসরি 7.5 তোলা নেই অর্থাৎ 3.5 তোলা এরকম আছে এবং রূপার ক্ষেত্রে
সাড়ে বায়ান্ন 52.5 তোলা সরাসরি বরং 30.5 তোলা এরকম মজুদ আছে তাহলে কি
করবেন।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে আপনার কাছে স্বর্ণ কিংবা রুপার নেসাব হওয়ার যে সীমানা
আছে সেটা যদি পরিপূর্ণ না থাকে তাহলে আপনাকে হিসাব করতে হবে আপনার প্রয়োজনের
অধিক যে সমস্ত বস্তু আদি রয়েছে সবগুলো মিলে যদি সাড়ে 52 তোলা রুপার পরিমাণ
পৌঁছায় অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের পরিমাণ পৌঁছায় তাহলে আপনার উপর কুরবানী
করা ওয়াজিব। "والله اعلم باالصواب"
কোরবানীর পশু জবাইয়ের নিয়ম
আবার অনেকেই কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই। কেননা আপনার
উপরে যদি কুরবানী ওয়াজিব হয় তাহলে আপনি যদি আপনার কোরবানির পশু জবেহ করেন
তাহলে এটা অন্যতম একটা সওয়াবের কাজ। কেননা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবাই করার
কথাটা হাদিসের মধ্যে এসেছে।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোরবানির পশু জবাই
করতেন তখন নিজেরটা নিজেই যাবেহ করতেন। তাছাড়া যার যার কুরবানীর পশু জবাই করার
কথাটা হাদিসের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে এসেছে। কুরবানীর পশু কিভাবে যাব কোরবানির
নিয়ম ও নিয়ত কি এসব বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে
থাকুন।
কোরবানির নিয়ম
আমাদের সমাজের মধ্যে অধিকাংশ লোক এমন আছে যারা কিনা কোরবানির পশু জবেহ করার
সঠিক পদ্ধতি ও নিয়ম না জানার কারণে নিজের পশু নিজেই জবাই করতে পারেন না। তবে
না-জানার বিষয়টা আমাদের এই আধুনিক জগতের মধ্যে কিংবা এত কিছু ইসলাম সম্পর্কে
স্পষ্টভাবেই আমাদের সামনে চলে আসার পরেও কোরবানির পশু জবাই করার পদ্ধতি
না-জানার কথাটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। কেননা নিজের কোরবানির পশু জবাই করার একটা
সৌভাগ্যের কাজ এবং সাওয়াবের কাজ।
অত্যন্ত সহজ কোরবানির পশু জবাই করা। তবে আপনি যখন কোন একটা কোরবানির পশু জবাই
করবে তখন সুন্নত মোতাবেক জবাই করার সবচেয়ে উত্তম এবং অতিরিক্ত সওয়াবের কাজ।
যেগুলো কিনা আমি আপনাদেরকে নিচে step-by-step বলে দিয়েছি। তাহলে চলুন আর কথা
না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
পশু কোরবানি করার নিয়ম
(১) আপনি যখন কোরবানির পশু জবাই করবে তখন "বিসমিল্লাহ" বলে জবাই করবেন সহজ
ভাষায় বলতে গেলে আপনি যখন চুরি নিয়ে পশু জবাই করবেন তখন বিসমিল্লাহ বলে চুরি
চালানো। অবশ্যই এটা খেয়াল রাখবেন যে কোন একটা পশু জবাই করার সময় সেটা যেন
আল্লাহ তাআলার নাম ব্যতীত অন্য কারো নামে জবাই করা না হয়। অর্থাৎ কুরবানীর পশু
হোক কিংবা অন্য কোন পশু জবাই করার সময় অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার নামে অর্থাৎ
বিসমিল্লাহ বলে জবাই করবেন।
(২) পশু জবেহ করার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হয় সেটা হচ্ছে আপনি যে পশু
জবাই করতে চেন সে ক্ষেত্রে গলার কোন কোন নালিগুলো কাটা অবশ্য সেটা কি জানেন?
তাই আপনি যবে করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং পশুর
দুই পাশে থাকা দুটি নালী কাটা যায়। এইসব গুলো যখন কাটা আপনার কমপ্লিট হয়ে
যাবে তখন পশু জবাই করা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম
(৩) পশু জবাই করার জন্য ছুরি ভালোভাবে ধার করা। ছুরি ভালোভাবে ধার করার মেইন
কারণ হচ্ছে যেন কোন প্রকার কষ্ট না পায়। আবার অনেক জবাইকারী একটা ভুল করে
থাকেন সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র একটা ছুরি দিয়ে কয়েকটা পশু জবাই করে থাকে যার
কারণে সেই চুরি টার ধার অত্যন্ত কমে যায়।
তাই অবশ্যই আপনার হাতে যে ছুরিটা থাকবে সেটা যেন সব সময় ধারালো থাকে। হাদীসে
এসেছেঃ-'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'পশু জবেহ করার
আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেয়া।' (মুসলিম)
কোরবানি করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
(৪) আপনি যদি কোন একটা পশু জবাই করেন সেক্ষেত্রে অন্য একটা পশুর সামনে
জবাই না করবেন। এবং আপনি কোন একটা ছুরি ধার করার সময় পশুর সামনে করবেন না।
কেননা এক্ষেত্রে আপনার এই কর্ম টা পশুকে কষ্ট দেওয়ার শামিল হিসেবে গণ্য হবে।
(৫) পশু জবাই করার সময় পশুকে পশুর বাম কাত করে শুয়ানো। অর্থাৎ সেসময় পশুর পা
গুলু পশ্চিম দিকে থাকবে।
(৬) পশু জবাই করার জন্য নির্দিষ্ট একটি দোয়া রয়েছে যেটা কিনা সরাসরি হাদিসের
মধ্যেই পাওয়া যায় অর্থাৎ দোয়াটি আপনি পশু জবাই করার জন্য শোয়ানোর পর
পড়বেন। তবে উলামায়ে কেরামের মধ্যে এ দোয়াটির সনদ সম্পর্কে মতানৈক্য রয়েছে।
তবে আপনি যদি এই দোয়াটি পড়ে কোরবানির পশু জবাই করেন তবে সেটা উত্তম একটা কাজ।
তবে আপনার কাছে যদি এই দোয়াটি মুখস্ত করতে কষ্ট হয় কিংবা দোয়াটি না আসে
তাহলে আপনি শুধুমাত্র বিসমিল্লাহ বলেই কোরবানির পশু জবাই করে ফেললেই শুদ্ধ হয়ে
যাবে।
কোরবানির দোয়া
আমরা অনেকেই কোরবানির দোয়া সম্পর্কে জানি আবার অনেকেই আছি যে কুরবানী করার
সময় কি দোয়া পড়তে হয় সেটা জানি না তাই আজ সবার জন্য কুরবানীর দোয়া
সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো
কোরবানির দোয়া আরবি
দোয়াটি হলোঃ اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا
مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي
لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا
مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ
لَكَ
(৭) আপনার কাছে যদি এই দোয়াটি পড়তে লম্বা মনে হয় কিংবা পুরোপুরি না আসে
তাহলে শুধুমাত্র অতটুকু পড়বেন بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ
مِنْكَ وَ لَكَ
(৮) কোরবানির পশু জবাই করার সময় যদি আপনার নিজের উপর নিজে জবাই করে অর্থাৎ
আপনি কোরবানি যেটা করতে সেটা যদি আপনি জব করেন তাহলে এই দোয়াটি পড়বেনঃ
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ
وَّ خَلِيْلِكِ
কোরবানির দোয়া বাংলা
(৯) আর কোরবানির পশুর যদি আপনি অন্যের পশু জবাই করেন অর্থাৎ আপনি যে পশুর
কুরবানী করতেছেন সেটা জবাই না করে অন্য কারো কোরবানির পশু জবাই করেন তাহলে এই
দোয়াটি পড়বেনঃ اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ
مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম
আমরা সকলেই জানি ইসলামের ইতিহাস অনেক প্রাচীন অর্থাৎ ইসলাম আগে থেকে আছে অনেক।
ঠিক তেমনি কোরবানির ইতিহাস বলতে গেলে অনেকটাই প্রাচীন যেটা কিনা আমাদের আদি
পিতা আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয়েছে।
কোরবানির গোশত কয় ভাগে ভাগ করতে হয়?
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে কুরবানী করা। নিজের
হালাল সম্পদ নিজের অর্জিত সম্পদ যেগুলো কিনা আপনি কষ্ট করে অর্জন করেছেন সেগুলো
ত্যাগ করার মাধ্যমে অর্থাৎ কোরবানির পশু জবাই করার মাধ্যমে কুরবানী করা আল্লাহর
সন্তুষ্টির একটা অন্যতম উপায়।
কুরবানীর গোস্ত বন্টনের সঠিক নিয়ম
কুরবানী করার সময় আমরা যে কোরবানির পশু জবাই করি সেখানে গরু,মহিষ ইত্যাদির
ক্ষেত্রে অনেক সময় ভাগ বসাতে হয়। সে ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি ভাগ করার
নিয়ম রয়েছে যেটা কিনা সরাসরি হাদিস থেকেই পাওয়া যায়। বর্ণিত আছেঃ আবদুল্লাহ
ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কোরবানির মাংস একভাগ নিজের পরিবারকে
খাওয়াতেন, একভাগ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ দিতেন গরীব-মিসকিনদের।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন (অর্থ)- ‘অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ,
অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (সূরা হজ্ব-২৮)।
কোরবানির মাংস কিভাবে বন্টন করতে হয়
তবে আপনি যদি কোরআন-হাদিসের দিকে নজর দেন তাহলে কোরবানির গোশত ভাগ করার তিনটি
ভাগের কথা পেয়ে যাবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে
কোন প্রকার নির্দিষ্ট অংশের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না মাংস ভাগ করার ক্ষেত্রে।
রাসূলুল্লাহর আমল থেকে পাওয়া যায় তিনি কুরবানীর গোশত থেকে নিয়ে কিছু কিছু
রান্না করতেন এবং বাকিগুলো দান-খয়রাত করে দিতেন।
তবে দেখা যায় আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রঃ) থেকে একটি বক্তব্য পাওয়া যায় সেটা
হলোঃ কোরবানির গোশত তিনভাগের একভাগ তোমার জন্য এবং আর তিন ভাগের এক ভাগ তোমার
পরিবারের জন্য, এবং বাকি আর তিন ভাগের এক ভাগ গরীব মিসকিনদের জন্য। অর্থাৎ এর
থেকে বোঝা যায় যদিও বা নবী (সাঃ) এর কাছ থেকে কোন প্রকার ভাগ করার নির্দিষ্ট
কোন পদ্ধতি পাওয়া যায় না কিন্তু নবি (সঃ) এর সাহাবি থেকে পাওয়া যায়।
গরু জবাই করার সময় মাথা কোন দিকে থাকবে
আপনি কি জানেন আপনি কুরবানীর কোরবানির পশু জবাই করতেছেন ঠিক আছে কিন্তু
কোরবানির গরু জবাই করার সময় মাথা কোন দিকে থাকবে? তবে কোরবানী শুদ্ধ হওয়ার
ক্ষেত্রে কোরবানির কোরবানির পশু কোন দিকে থাকবে কোনদিকে করে কোরবানির পশু জবাই
করতে হবে এটা মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হচ্ছে আপনার নিয়তের উপর এবং কার নাম
ধরে আপনি কোরবানির পশু জবাই করতেছেন সেটা।
তবে যেহেতু কুরবানি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম যার মধ্যে
কিনা মূলত কবে করা হয় বিসর্জন করার জন্য আল্লাহর রাস্তায় নিজের হালাল টাকা
দিয়ে। তাই অবশ্যই গরু জবাই করার ক্ষেত্রে উত্তম একটা পদ্ধতি থাকবেই। যেটা কিনা
আমরা অনেকে জানিনা তো এখন আমরা কোরবানির কোরবানির পশু জবেহ করার সময় মাথা কোন
দিকে থাকবে অর্থাৎ কোন দিকে করে আপনি জবাই করবেন সেটা জানবো। তাহলে এখন জেনে
নেয়া যাক এসব বিষয় নিয়ে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা! কোরবানির পশু জবাই করার সময় দক্ষিণ দিকে মাথা এবং উত্তর
দিকে পা রাখা এটি উত্তম একটি আমল। তবে কোরবানির কোরবানির পশু জবাই করার সময়
শুধুমাত্র বিসমিল্লাহ বলে যাবে করলে এটা হালাল হয়ে যায়।
পশ্চিম মুখী কিংবা কেবলামুখী হওয়া জরুরী কোন কিছুই নেই। তবে আপনি যদি এটি করেন
তাহলে সেটা আপনার জন্যই উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম এবং সলফে সালেহীন রা এ বিষয়ের
দিকে লক্ষ্য রাখতেন। তাছাড়া আমরা যদি চার মাযহাবের দিকে লক্ষ্য করি তখন দেখতে
পাই সবগুলো মজহাবে এটাকে উত্তম বলে গণ্য করা হয়েছে।
যবেহ কারী ব্যক্তি এবং যবেহকৃত কোরবানির পশুর মুখমন্ডল উভয়ের চিনা এটা যেন
কেবলামুখী থাকে কিংবা পশ্চিমমুখী থাকে এটি উত্তম। আপনি যদি না করেন তাহলে কোন
অসুবিধা নেই তবে বিসমিল্লাহর উপর যবেহ হইতে হবে।
বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করা জরুরি না হানাফী মতে। তবে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ
করা উত্তম। তবে আপনি যদি বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ না করেন এবং মনে মনে
বিসমিল্লাহ উচ্চারণ করেন তাহলে সেটা শুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই আবারও বলি কেবলা মুখী
হওয়াটাও জরুরী না কিন্তু উত্তম একটি আমল। তবে কোন একটা বিষয় উত্তমটা না করতে
কে না চায়।
উপসংহারঃ আপনার যদি কোরবানির নিয়ম
সম্পর্কে লেখা আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগে অর্থাৎ একটু হলেও উপকার আসে তাহলে
আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না। কেননা
ইসলাম সম্পর্কে ইসলামিক মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে কোন একটা বিষয় শেয়ার করার
অর্থ হচ্ছে আপনিও ইসলাম প্রচারের কাজ করতেছেন।
এর ফলে আপনি প্রচুর নেকি হাসিল করতে পারবেন। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন আমরা
যেহেতু মানুষ তাই এখানে অনেক কিছু ভুল হতে পারে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে
আপনাদের চোখে যদি কোন প্রকার ভুল দেখা যায় তাহলে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে
দিবেন খুব দ্রুত দয়া করে। ধন্যবাদ।