ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি | কী কী কারণে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়
নামাজ যেমন বেহেস্তের চাবি তেমনি অজুকে নামাজের চাবি বলা যেতে পারে, কারণ অজু করা ব্যতীত অর্থাৎ পবিত্র হওয়া ছাড়া নামাজ আদায় করা যায় না। তাই ওদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমাদের সর্বদা মাথায় থাকা উচিত।
অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি এবং কি কি কারণে ওযু ভেঙে যায় একজন মুসলমান হিসেবে এবং নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সে সকল বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। চলুন এখন জেনে নেই ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ এবং প্রত্যেকটি কারণের সহি হাদিস ও দলিল সহ দেয়া থাকবে।
আশা করছি ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন এবং পরবর্তীতে আপনার অযুত নষ্ট হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারবেন। তা ছাড়া এখানে ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে।
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি
কী কী কারণে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়
যে সকল কারণে ওযু ভেঙে যায় অর্থাৎ ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি নিচে ব্যাখ্যা সহ উল্লেখ করা হয়েছে, আশাকরি আপনারা খুব সহজেই ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।
১. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া
(হেদায়া, হাদিস : ১/৭)
ব্যাখ্যাঃ ওযু ভঙ্গের কারণ গুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং প্রথম যে কারণটি বিবেচনা করা হয় সেটি হচ্ছে, পায়খানা বা প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে আমাদের পায়ুপথ দিয়ে অথবা প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যেকোনো কিছু বের হলে, যেমন-
- বায়ু ত্যাগ করা
- মলত্যাগ করা
- প্রস্রাব করা
- এমনকি বীর্যপাত হওয়া
এ সকল ক্ষেত্রে অজু ভঙ্গ হয়ে যায়। অর্থাৎ আমাদের পায়ুপথ অথবা প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যেকোনো কিছু বের হলে অজু ভেঙ্গে যাবে এবং পুনরায় ওযু করতে হবে।
২. রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
(হেদায়া : ১/১০)
ব্যাখ্যাঃ ওযু ভঙ্গের কারণ গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় যে কারণটি সেটি হচ্ছে, শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থান হতে
- রক্ত
- পূঁজ
- পানীয়
এসকল ক্ষতস্থান হতে বের হলে এবং সেটি ঘড়ি এ পড়ার উপক্রম হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এখানে গড়িয়ে পড়ার অর্থ হচ্ছে ক্ষতস্থানের মুখ অতিক্রম করা।
৩. মুখ ভরে বমি করা
(সুনানে ইবনে মাজাহ - ১২২১)
ব্যাখ্যাঃ ৩ নাম্বার ওযু ভঙ্গের কারণ হল মুখ ভরে বমি করা। যদি বমির পরিমাণ খুব বেশি হয় অর্থাৎ মুখ ভরে বমি করে সেক্ষেত্রে তার অজু ভেঙ্গে যাবে তবে বমি বমি ভাব অথবা খুব সামান্য বমি হলে ওযু ভাঙবে না।
৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা - ১৩৩০)
ব্যাখ্যাঃ যেকোনো কারণে থুতুর সঙ্গে যদি রক্ত বের হয় এবং তার পরিমাণ থুতুর সমান অথবা বেশি হয় সে ক্ষেত্রে অজু ভেঙ্গে যাবে। যদি খুব সামান্য রক্ত থুতু সঙ্গে বের হয় সেক্ষেত্রে ওযু ভাঙবে না। রক্তের পরিমাণ থুতুর সমান বা বেশি হলে সেক্ষেত্রে অজু ভেঙ্গে যাবে এবং পুনরায় ওযু করতে হবে।
৫. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
(আবু দাউদ, হাদিস : ২০২)
ব্যাখ্যাঃ পাঁচ নাম্বার অজু ভাঙ্গার যে কারণটি সেটি আমাদের খুব ভালো করে জানা উচিত। চিৎ বা কাত হয়ে কোন কিছুতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। হেলান দিয়ে ঘুম দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি কোন কিছুতে হেলান দিচ্ছেন এবং সে অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লেন বা ঘুমিয়ে পড়া অবস্থা তখন যদি হেলান দেওয়া বস্তু সরানো হয় তাহলে আপনার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে ক্ষেত্রে আপনার ওযু ভেঙ্গে যাবে।
শুক্রবারে জুমার দিনে খুতবা শুনতে হয় তখন অনেকেই মসজিদের পিলারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে অর্থাৎ ঘুমিয়ে পড়ে, এরকম করে হেলান দিয়ে ঘুম দেওয়ার ফলে ওযু ভঙ্গ হবে। জুমার দিনের কথায় মনে হয়ে গেলো জুম্মা মোবারক স্ট্যাটাস ও মেসেজ খুবই সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করার জন্য।
৬. পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে
(মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, - ৪৯৩)
ব্যাখ্যাঃ ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহের এ পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ওযু ভঙ্গের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে পাগল মাতাল ও সচেতন হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- পাগল / কাণ্ডজ্ঞান হীন
- মাতাল / মাদকাসক্ত
- অচেতন / অজ্ঞান
৭. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে
(সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)
ব্যাখ্যাঃ ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ এখন যে কারণটি বলবো সেটি হচ্ছে নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ভেঙে যায়। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে জানাজার নামাজের ক্ষেত্রে। এর মানে আমরা বলতে পারি যে সকল নামাজে সিজদা এবং রুকু রয়েছে সেসকল নামাজে উচ্চস্বরে অর্থাৎ অট্টহাসি হাসলে ওযু ভেঙ্গে যাবে।
মেয়েদের ওযু ভঙ্গের কারণ
প্রশ্নঃ- পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়?
উত্তরঃ- পাদ দিলে অজু ভেঙ্গে যাবে কারণ ওযু ভঙ্গের প্রথম যে কারণটি সেটি হচ্ছে পায়খানা প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যেকোনো কিছু বের হওয়া অর্থাৎ বাদ দিলে অজু ভেঙ্গে যাবে।
প্রশ্নঃ-রক্ত বের হলে কি ওযু ভাঙ্গে?
উত্তরঃ- রক্ত কি পরিমান বের হচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করে ওযু ভাঙবে কি ভাঙবে না সেটা ডিপেন্ড করবে। ক্ষতস্থান হতে রক্ত যদি বের হয়ে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয় অর্থাৎ ক্ষতস্থানের মুখ অতিক্রম করে সেক্ষেত্রে অজু ভেঙ্গে যাবে অন্যথায় ওযু ভাঙবে না।
প্রশ্নঃ-নখ কাটলে কি ওযু ভাঙ্গে?
উত্তরঃ- নখ কাটলে অজু ভাঙ্গার কোন দলিল পাওয়া যায়নি তবে সতর্ক থাকতে হবে নখ কাটতে গিয়ে যেন রক্ত বের না হয়।
প্রশ্নঃ-অযু ভঙ্গের কারণ ৭ টি কি কি
উত্তরঃ- ওযু ভঙ্গের কারণ সাতটি ওপরে ব্যাখ্যা সহ দেওয়া আছে তবুও এখানে খুব সংক্ষেপে ওযু ভঙ্গের কারণ সাতটি উল্লেখ করা হলো--
- পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া
- রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া
- মুখ ভরে বমি করা
- থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
- চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
- পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে
- নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে
গোসলের ফরজ তিনটি কি কি জানুন
কী কী কারণে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়
যে সকল কারণে ওযু ভেঙে যায় অর্থাৎ ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ খুবই সুন্দরভাবে উপরে উপস্থাপন করা হয়েছে যা থেকে আপনারা ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ এবং কি কি কারণে ওযু ভেঙে যায় তার সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।
স্বীকারোক্তিঃ- আজকের উল্লেখিত ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ এর মধ্যে কোন কারন আপনার কাছে ভুল মনে হলে বা সঠিক তথ্য ও দলিল থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন ইনশাল্লাহ আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সংশোধন করে দেওয়ার।